নামের প্রথমে হাজী বা আলহাজ্ব লেখা কি ইসলামের জায়েজ আছে ?
নামের প্রথমে ‘হাজি’ বা আলহাজ ব্যবহার কি জায়েজ ?
হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি অংশ বিশেষ। এটি শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। এটিকে প্রেমময় ইবাদতও বলা হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ্কে সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান মক্কা মদিনায় হজ্ব আদায় করেন।
হজ একমাত্র মহান আল্লাহ্কে সন্তুষ্টির জন্য করা হয়। আর এমনিভাবে যারা হজ্ব করেন তাদের সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর উদ্দেশে হজ্ব করল এবং ওইদিন অশ্লীল কথাবার্তা, সহবাস ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে যেদিন তাকে তার মা জন্ম দিয়েছিলো। বুখারি: ১৫২১
১০ শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ্ ভালোবাসেন না ?
আমাদের সমাজে অনেক সময় দেখা যায় হজ্ব থেকে ফিরেই শুরু হয়ে যায় নামের প্রথমে ‘হাজি অথবা ‘আলহাজ’ উপাধিটা ব্যবহারের হিরিক পড়েছে । নিজের পরিচয় দেন ‘হাজি’ অথবা ‘আলহাজ’ বলেও। ধর্মীয় সভা ও মাহফিলগুলোতে কোন কথাই নেই ‘হাজি’ বা ‘আলহাজ’ বিশেষণ ব্যবহার করা হয়। আবার অনেকে এ বিশেষণ ব্যবহার না করলে রাগও হয়। এখন প্রশ্ন হলো- এভাবে নামের শুরুতে ‘হাজি’ বা ‘আলহাজ’ ব্যবহার করা কি জায়েজ আছে ?
ইসলামের প্রতিটি আমল করা হয় একমাত্র মহান রাব্বুল আলামিনকে সন্তুষ্টির জন্য যিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তার সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যেই যতো আমলই করা হোক, তা গ্রহণযোগ্য হবে না একান্তই হবে না। আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে খুশি করার নিয়তে কোনো নেক আমল করাকে রিয়া বলে । এ সমস্ত কে লৌকিকতা বা লোকদেখানো কাজ বলে। পবিত্র আল আলকোরআনে মহান আল্লাহ্ লোকদেখানো ইবাদত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ জারী করেছেন। মহান আল্লাহ্ বলেন, যে ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেন সৎ কাজ করে এবং তার প্রভুর ইবাদত, হুকুমে কাউকে অংশীদার না করে। সুরা কাহাফ: ১১০
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিয়াকে ছোট ছোট শিরক বলেছেন। তিনি বলেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতটা ভয় পাচ্ছি অন্য কোনো ব্যাপারে এতটা ভয় পাই নই ।
এক সাহাবী আল্লাহ্ রাহুলকে বললেন ছোট শিরক কী রাসুল বলেন রিয়া বা প্রদর্শন প্রিয়তা । আল্লাহ্ নিজে কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বান্দার আমলের প্রতিদান দেয়ার সময় নিশ্চয় বলবেন এটা হাদিসে প্রমাণিত । তোমরা পৃথিবীতে যারা লোক সমাজে দেখাতে তাদের কাছে নিজে যাও দেখো তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না । মুসনাদে আহমদ: ২২৫২৮।
আর হজের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আল্লাহ মুখী হওয়া। হজ্ব পালনকারী ব্যক্তি ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা..। অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি তোমার দরবারে হাজির হয়ে গেলাম। দুনিয়ার সবকিছু ত্যাগ করে আমি তোমাকে চাই । তোমার সন্তুষ্টিই আমার জীবনে একমাত্র লক্ষ্য । কাজেই এই তালবিয়া পাঠের পর কোনো হাজি তার হজ দ্বারা পার্থিব সুনামকে নিজের লক্ষ্য বানাতে পারেন না, পারে না।
হজ্ব এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল হওয়ায় শয়তান হাজির নিয়ত নষ্ট করতে তৎপরতা হয়। এ জন্যই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হজের তালবিয়া পাঠ করেন তখন একথা বলেন, হে আল্লাহ্ আমি তোমার উদ্দেশ্য করে হজ্ব করতে যাত্রা শুরু করলাম কোনো মানুষের সুনাম, যশখ্যাতি যেন আমাদের উদ্দেশ্য না হয়। ইবনু মাজাহ ।
বিশেষ করে জানার চেষ্টা হলো হজ্ব ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি । এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ' হলো প্রত্যেক ব্যক্তিকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এতে মহান রাব্বুল আলামিন নিজেই পুরস্কৃত করেন। যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন তাকে বলা হয় মুসল্লি আর এই ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে হজের ফরজ আদায় প্রাতিনিয়তো করেছেন তাকে বলা হয় হাজি অর্থাৎ যে ব্যক্তি প্রতিদিন পাঁচবার হজের ফরজ আদায় করেছেন ঐ ব্যক্তি হচ্ছে হাজি ।সবাই বলেন সুবাহানাল্লাহ। জীবনে একবার হজ্ব করে হাজি বা আলহাজ্ব হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পর কেউ নিজের নামের প্রথমে মুসল্লি বা আলমুসল্লি কথা যোগ করে না। তাই আপনারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন ইনশাআল্লাহ হজের ফরজ আদায় হয়ে যাবে । আর যাদের অর্থ রয়েছে এবং হজ্ব তার জন্য উপযুক্ত হয়েছে তারা অবশ্যই আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করবেন ।
তবে কেউ যদি শ্রদ্ধার সাথে হাজি বা আলহাজ্ব বলে ডাকেন, তাতে কোনো অসুবিধা নেই । এতে করে যিনি হজ্ব আদায় করেছেন তিনি যাতে গর্ব বা অহংকারবোধ না করেন ।
ইসলামিক বার্তা
Comments
Post a Comment