বিবেক কাকে বলে

আমরা সবাই সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করার নামেই হচ্ছে পরিবার। সন্তাদের নিয়ে ছোট থেকে বড় করে তিল তিল করে অনেক পরিশ্রমের সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে বড় করা হয়।
পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য সুখে-শান্তিতেই থাকতে চায় । কিন্তু আসলে সে সুখ সবার কপালে জোটে না কেউ কেউ পরিবারের সেই বন্ধনটাও পায় না। এজন্য নানা কারণে অকারনে আপন নিবাস অর্থাৎ তাদের ঘর ছেড়ে যেতে হয় পরিবারের সবচেয়ে বয়সী মানুষটির। আপন ঘরে থেকে তার কপালে জোটে না থাকার প্রচেষ্টা তার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন বৃদ্ধ মানুষকে আপনারা সব সময় সাহায্য করবেন পাশে থাকবেন এবং তাদেরকে সুখময় জীবন উপলব্ধি করার চেষ্টা করবেন । বর্তমান সমাজে প্রবীণরা এতটাই নির্ভীক নির্বোধ হয়েছেন বৃদ্ধ বাবা আমাদের প্রতি অবিচার ও অন্যায় প্রতিনিয়ত করতেছে ।
কিন্তু বর্তমানে সামাজিক সাংস্কৃতিক যে পরিবর্তন দেখা যায় ও অর্থনৈতিক নানা পরিবর্তনের ফলে যৌথ পরিবারগুলো একে একে ভেঙে যাচ্ছে । এজন্য পরিবারের প্রবীণরা হারাচ্ছে তাদের প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে অবহেলা আর লাঞ্ছনা বঞ্চনা।
আসলে ভাবাই যায় না বৃদ্ধরা যে বয়সে নাতি নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা সময় কাটছে বৃদ্ধাশ্রমের একাকীত্ব বিছানায় চারদিকের দেওয়ালের মাঝ প্রান্তে । একাকীত্ব জীবনযাপন মানসিক যন্ত্রণার কারণ । পরম মমতা ও গভীর ভালোবাসায় সন্তানদের বড় করে একসময় বৃদ্ধ মা-বাবা সেই সন্তানের কাছেই হয়ে উঠে বোঝার কারণ। বৃদ্ধ বাবা মার প্রতি এরকম অবহেলা যারা করে উপরওয়ালা তাদের স্থান লিখেছেন জাহান্নামে ।
উদাহরণ: ১
পরিবারের ভালোবাসার মানুষটি নিজের জীবনকে বাজি রেখে সারা জীবন ধরে প্রবাসে কাটিয়ে দেন শুধু টাকা উপার্জন করার জন্য । হয়তো সেই টাকায় পরিবারের সাত ছন্দ বোধ এবং একটু হাসি ফোটানোর জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে । নিজেকে না খেয়ে রাত দিন পরিশ্রম করে । আর বৃদ্ধ বয়সে যখন দেশে ফিরে তখন তার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে । এটাই কি ছিল তার জীবনের একমাত্র পাওয়া এটাই কি ছিল তার জীবনের পরিবারের কাছ থেকে একমাত্র চাওয়া পাওয়া । আসলে ভাবতেই অবাক লাগে । সন্তানেরা এভাবে যুদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি এত অবিচার করে হয়তো তারাও একদিন বুঝবে যেদিন তারা বৃদ্ধ হয়ে যাবে । কর্মের ফল সারা জীবন তাকে ভোগ করতে হবে ।
প্রবাসী জীবন খুব কষ্টের জীবন সেই প্রবাসী সুখে শান্তিতে পরিবারের সঙ্গে থাকার কথা কিন্তু আজ তিনি বড় একা সন্তান নাতি নাতনি সবাইকে ছেলে থাকতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে । কপালের কি নির্মম পরিহাস । যার জন্য প্রবাসের জীবন এত কষ্টকর শুধু একমাত্র পরিবারের মুখের হাসি ফোটানোর জন্য সারা জীবন পার করলে কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস পরিবার-পরিজন তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিল আহারে জীবন ।
প্রবাসীর ছেলেমেয়েদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার বৃদ্ধ বাবাকে কেন আপনি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিলেন । উত্তরে বলে আমরা চাকরি করি আমরা বিভিন্ন কাজে সময় পার করি দেখ ভাল করার মানুষ নাই তাই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়েছি ।
একটিবার চিন্তা করে দেখেন যে মানুষটি তাদের সন্তান পরিবারের প্রিয়জন সবকিছু ছেড়ে সারা জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেলেন শেষ প্রান্তে তার জায়গা হল বৃদ্ধাশ্রমে । নিয়তির এরকম নির্মম পরিহাস কখনো ভুলার মত না এটা বাস্তবে আমাদের সমাজে দেখা গিয়েছে ।
যে প্রবাসীর বৃদ্ধাশ্রমে ঠাই হল ছোট্ট একটি পক্ষে । সন্তানের নিষ্ঠুরতা ও অবহেলা তাকে নিরুপায় করে দিয়েছে । প্রবাসীর জীবনে এত কষ্টকর হয়তো কখনো অনুভব করা যায় না ।
সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাদের অনাগত ভবিষ্যতকে আরও সমৃদ্ধশালী করার মানসে তিনি সন্তানদের নামে সব কিছু লিখে দিলেন, আর এটাই হল তার সর্বনাশের কারণ। সম্পদ লিখে দেয়ার পর সন্তানরা আর আগের মতো তার কাছে ভেড়ে না। সন্তানদের স্ত্রীরা তাকে অবজ্ঞা করে।
তবে সেক্ষেত্রে বৃদ্ধাশ্রমে তিনি সুখে শান্তিতেই রয়েছেন । হাজারো কষ্ট বুকে নিয়ে যিনি খেয়ে দে না খেয়ে দিন পার করেছেন সেই সন্তানেরা বা পরিবার পরিচলনরা যদি দূরে ঠেলে দেয় সে ক্ষেত্রে কি আর করার বিধাটা নির্মম করিহাস তাকে তো মেনে নিতেই হবে । তিনি নিরুপায় হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে একাকীত্ব বসবাস করতেই পারবে । তবে সন্তানদের উচিত বৃদ্ধ বাবা-মার সঙ্গে সঙ্গ দেয়া এবং তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া ।
উদাহরণ :২
বয়স ৬৫ ছুঁইছুঁই । পুরান ঢাকায় তার জন্ম। সর্বোচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাট চুকিয়ে সরকারের উচ্চপদে চাকরি করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।
নামটি ছিল ড্যাশ ড্যাশ প্রকাশের অনিচ্ছু কিন্তু নিয়তির কি ভাগ্যের পরিহাস কর্মজীবনে ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী বৃদ্ধ বয়সে হয়ে গেছেন বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি এটা সন্তানদের একমাত্র বুদ্ধি ।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কর্মজীবনে সফল নারী সুলতানা চৌধুরীর শেষ জীবনে স্থান হয়েছে রাজধানীর একটি প্রবীণ নিবাসে। সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ দিয়ে একমাত্র সন্তানকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠিয়েছিলেন।
হয়তো ভেবেছিলেন সন্তানের পড়াশোনা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই জীবনের বাকিটা সময় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেই কাটাবেন তিনি। সন্তান বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন পর সুলতানা চৌধুরী তার স্বামীকে চিরতরে হারান।
নিজের বাড়ি নিজের এটুকু সম্বল তার কিছু অংশ বিক্রি করে ছেলের সন্তানের লেখাপড়া চালাতেন ।
তিনি ভেবেছিলেন, জীবনের শেষ সময়ে অসহায় মাতার সহায় হবে তার আদরের নাড়িছেঁড়া ধন। কিন্তু বিধি বাম। তা ভাগ্যে জুটলো না । শত কষ্টের মাঝেও সে সেটিং হয়ে গেল সেই প্রবাসী । ফজ নিল না তার জন্ম ধাত্রী মায়ের । এ নারীর শেষ আশ্রয়স্থল এখন প্রবীণ নিবাসেই। শেষ জীবনে পেনশনে পাওয়া সামান্য কিছু টাকা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে পরে নিঃসঙ্গ জীবন পার করছেন বৃদ্ধাশ্রমে এ বৃদ্ধা ।
শেষ জীবনে এসে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হবে সেটি কল্পনাতে ছিল না তার। সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের জন্য আনন্দে কাটবে তার শেষ সময়টা এমটাই ছিল তার জীবনের ভাবনায় ।
ইসলামিক বার্তা
যারা বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখে তারা মানুষ না
ReplyDelete